চিকিৎসা বিজ্ঞানের আলোকে নামাজের শারীরিক কিছু উপকারিতাঃ
চিকিৎসা বিজ্ঞানের আলোকে নামাজের শারীরিক কিছু উপকারিতাঃ
নামাজ ফরজ ইবাদাত। আল্লাহ তাআলা প্রতিদিন সব মুসলমানের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজকে ফরজ করেছেন। এ নামাজ পরকালের মুক্তি লাভের অন্যতম মাধ্যম। কারণ পরকালে সর্বপ্রথম নামাজের হিসাব গ্রহণ করা হবে। যে ব্যক্তি নামাজের হিসাব সুন্দরভাবে দিতে পারবে, তার পরবর্তী হিসাব সহজ হয়ে যাবে।
আবার নামাজ দুনিয়ায় সব ধরনের অশ্লীল ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে। শুধু তাই নয়, নামাজের মাধ্যমে নামাজি ব্যক্তি অনেক শারীরিক উপকার লাভ করে। যার কিছু তুলে ধরা হলো-
দাঁড়ানোঃ
মানুষ যখন নামাজে দাঁড়ায়; তখন সব চোখ সিজদার স্থানে স্থির থাকে। ফলে মানুষের একাগ্রতা ও মনোযোগ বৃদ্ধি পায়।
রুকুঃ
নামাজি ব্যক্তি যখন রুকু করে এবং রুকু থেকে ওঠে সোজা হয়ে দাঁড়ায় তখন মানুষের কোমর ও হাঁটুর ভারসাম্য রক্ষা হয়। রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায়। ফলে কোমর ও হাটু ব্যাথা উপশম হয়।
সিজদাঃ
নামাজে যখন সিজদা করা হয় তখন নামাজি ব্যক্তির মস্তিস্কে দ্রুত রক্ত প্রবাহিত হয়। ফলে তার স্মৃতি শক্তি বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। আবার সিজদা থেকে ওঠে যখন দুই সিজদার মাঝখানে বসে এতে তার পায়ের উরু ও হাঁট সংকোচন এবং প্রসরণ ঘটে। এতে করে মানুষের হাঁটু ও কোমরের ব্যথা উপশম হয়।
ওঠা বসাঃ
নামাজের সময় নামাজি ব্যক্তিকে দাঁড়ানো, রুকুতে যাওয়া, রুকু থেকে ওঠে সোজা হয়ে স্থির দাঁড়ানো, আবার সিজদায় যাওয়া, সিজদা থেকে ওঠে স্থিরভাবে বসা, আবার সিজদা দিয়ে দাঁড়ানো বা বসা। এ সবই মানুষের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যায়াম। এতে মানুষের শারীরিক বহুবিদ উপকার সাধিত হয়।
মানসিকতার পরিবর্তনঃ
নামাজের মাধ্যমে মানুষের মন ও মানসিকতায় অসাধারণ পরিবর্তন আসে। গোনাহ, ভয়, নীচুতা, হতাশা, অস্থিরতা, পেরেশানি ইত্যাদি দূরভীত হয়। ফলে বিশুদ্ধ মন নিয়ে সব কাজে সম্পৃক্ত হওয়া যায়।
দেহের কাঠামোগত উন্নতিঃ
নামাজ মানুষের দেহের কাঠামোগত ভারসাম্যতা বজায় রাখে। ফলে স্থুলতা ও বিকলঙ্গতা হার কমে যায়। মানুষ যখন নামাজে নড়াচড়া করে তখন অঙ্গগুলো স্থানভেদে সংবর্ধিত, সংকুচিত হয়ে বিশেষ কাজ করে থাকে। অঙ্গ ও জোড়াগুলোর বর্ধন ও উন্নতি এবং শক্তি বৃদ্ধি পায়।
পরিচ্ছন্ন রাখেঃ
নামাজের জন্য মানুষকে প্রতিদিন পাঁচবার অজু করতে হয়। আর এতে মানুষের ত্বক পরিষ্কার থাকে। ওজুর সময় মানুষের দেহের মূল্যবান অংশগুলো পরিষ্কার হয় য দ্বারা বিভিন্ন প্রকার জীবানু হতে মানুষ সুরক্ষিত থাকে।
চর্মরোগে আক্রান্ত হওয়ার ভয় কম থাকেঃ
নিয়মিত নামাজ আদায়কারী ব্যক্তিকে দৈনিক বহু বার উযু করতে হয়। পবিত্রতা অর্জনের লক্ষ্যে তাকে তার হাত, পা, চোখ কানসহ গোটা মুখমন্ডল বার বার উত্তমরূপে ধৌত করতে হয়। এর ফলে তার শরীরের উম্মুক্ত স্থানগুলোতে রোগজীবানূ কিংবা অন্য কোন প্রকার ময়লা জমে থাকার সুযোগ পায় না। এ কারণে একজন নামাজী ব্যক্তির হাত, পা এবং মুখমন্ডল ইত্যাদি অঙ্গ প্রত্যঙ্গ চর্মরোগে আক্রান্ত হওয়ার ভয়ও অপেক্ষাকৃত কম থাকে।
চেহারার লাবন্য বৃদ্ধিঃ
নামাজের জন্য মানুষ যতবার অজু করে, ততবারই তার মুখমণ্ডল ধৌত করা হয়ে থাকে। মুখমন্ডলের মাংশপেশিতে এক প্রকারের ম্যাসেজও হয়ে যায় এর ফলে। এতে মুখমণ্ডলে রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি পায়। ফলে মানুষের চেহারার লাবন্য বৃদ্ধি পায়, মুখের বলিরেখা ও মুখের দাগ কমে যাওয়ার মত ঘটনাও লক্ষ্য করা যায়।
ফজরের নামাজের সময় ও চিকিৎসা বিজ্ঞানঃ
বলা বাহুল্য, সারা রাতের দীর্ঘ নিদ্রাযাপনের পরে জেগে উঠেই ফজরের সময় নামাজ আদায় করলে শরীর চর্চার হালকা একটি অনুশীলন হয়ে যায় অতি প্রত্যুষে, দিনের প্রারম্ভিক পর্বেই। এ সময় পাকস্থলী খালি থাকে বলে কঠিন অনুশীলন শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এ সময়ে নামাজ আদায় করলে নামাজি অবসাদগ্রস্ততা ও অচলতা থেকে মুক্তিলাভ করে। মস্তিষ্ক ফ্রি হয়ে পুনরায় চিন্তা করার জন্য প্রস্তুত হয়। দিন রাতের পরিবর্তনের মেলবন্ধনের অতি গুরুত্বপূর্ণ এ সময়টি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। নামাজি এ সময়ে হেঁটে হেঁটে মসজিদে যায় আর এর ফলে তার আত্মা লাভ করে ভিন্ন এক প্রশান্তি। নামাজীর হৃদয় মন সুবহে সাদিকের পরিচ্ছন্ন এবং প্রশান্ত পরিবেশ থেকে সূক্ষ্ম অনুভূতি লাভ করে- এসবই উপকারী। নামাজের জন্য পবিত্রতা অর্জন অন্যতম শর্ত হওয়ার কারণে এ সময়ে নামাজী তার শরীরের সকল অঙ্গ প্রত্যঙ্গ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে নেয়। মিছওয়াকসহ উযুতে অধিক সাওয়াব বিবেচনায় সে দিবসের সূচনাতেই উত্তমরূপে মুখ ও দাঁত পরিষ্কার করে নেয়।প্রসাব-পায়খানার প্রয়োজন পূরণ করে নেয়ার পরে উত্তমরূপে অর্জন করে নেয় পবিত্রতা। এতে জীবাণুর আক্রমণ থেকে বাঁচা যায়। অভিজ্ঞ ডাক্তারগণের মূল্যায়ন, নিয়মিত প্রত্যুষে পরিচ্ছন্নতালাভের এই প্রক্রিয়া ধারাবাহিকভাবে অনুসরণে অন্ত্ররোগ ও আলসার থেকেও রক্ষা পেতে সহায়ক। রোমের খ্যাতনামা পাদরি হিলার তার লেখনিতে ফজরের নামাজে ওঠার বিষয়ে নিজের অভিব্যক্তি ব্যক্ত করেন এভাবে যে, ভোরের নামাজের জন্য ওঠা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যাশ্চর্য প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। -প্রার্থনা গ্রন্থ
যুহরের সময় ও চিকিৎসা বিজ্ঞানঃ
মানুষ জীবিকার জন্য দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন কাজ করে। এতে ধুলা, ময়লা, বিষাক্ত কেমিকেল শরীরে লাগে। দেহে জীবাণু আক্রমণ করে। ওজু করলে এসব দূর হয় এবং ক্লান্তি দূর হয়ে দেহ পুনর্জীবন লাভ করে। গরমের কারণে সূর্য ঢলে পড়ার সময় বিষাক্ত গ্যাস বের হয়। এ গ্যাস মানবদেহে প্রভাব ফেললে মস্তিষ্ক, পাগলামিসহ বিভিন্ন রোগ হতে পারে। এ সময় ওজু করে নামাজ আদায় করলে এ গ্যাস প্রভাব ফেলতে পারে না ফলে দেহ বিভিন্ন রোগ থেকে বেঁচে যায়। এ সময় আল্লাহ নামাজ ফরয করে আমাদের জন্য অনুগ্রহ করেছেন।
আসরের সময় ও চিকিৎসা বিজ্ঞানঃ
পৃথিবী দুই ধরনের গতিতে চলে। লম্ব ও বৃত্তীয়। যখন সূর্য ঢলতে থাকে তখন পৃথিবীর ঘূর্ণন কমতে থাকে। এমনকি আসরের সময় একেবারেই কমে যায়। এ সময় রাতের অনুভূতি প্রবল হতে থাকে। প্রকৃতির মধ্যে স্থবিরতা এবং অবসাদগ্রস্ততা প্রদর্শিত হতে থাকে। আসরের নামাজের সময় অবচেতন অনুভূতির শুরু হয়। এ সময় নামাজ আদায় করলে অতিরিক্ত অবসাদগ্রস্ততা, অবচেতন অনুভূতির আক্রমণ থেকে বাঁচা যায়। মানসিক চাপ ও অস্থিরতা কমে। নূরানি রশ্মি নামাজিকে প্রশান্তি দান করে।
মাগরিবের সময় ও চিকিৎসা বিজ্ঞানঃ
সারাদিন মানুষ জীবিকার জন্য শ্রম ও কষ্টের মধ্যে কাটায়। মাগরিবের সময় ওজু করে নামাজ আদায়ের ফলে আত্মিক ও দৈহিক প্রশান্তি লাভ হয়। এ সময় নামাজ আদায়ে পরিবারের বাচ্চারাও অংশ গ্রহণ করতে পারে। এতে বাচ্চারা অনুগত, পুণ্যশীল হয়। এ সময় পরিবারের মধ্যে আনন্দের রেশ বয়ে যায়।
ইশার সময় ও চিকিৎসা বিজ্ঞানঃ
সারা দিনের কর্মযজ্ঞ শেষে মানুষ বাসায় ফিরে রাতে খাবার খায়। এ সময় খেয়ে সাথে সাথে ভরা পেটে শুয়ে পড়লে বিভিন্ন রোগ বালাই হতে পারে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, অল্প ব্যায়াম করে বিছানায় গেলে এই সমস্যার আশঙ্কা থাকে না। এই কারণে রাতের প্রথম প্রহরের দিকে ইশার নামাজ শারীরিক সুস্থতায় বিশাল ভূমিকা পালন করে। এটি রাতে বিশ্রামে যাওয়ার পূর্বে সাধারণ যে কোন প্রকারের ব্যায়ামের চেয়েও অধিক উপযোগী। ঘুমানোর পূর্বেকার দিনের সর্বশেষ এই নামাজ আদায়ে অন্তরে প্রশান্তি লাভ হয়। পাশাপাশি আহারকৃত খাদ্য পানীয় হজমেও সহায়ক হয় এবং সর্বোপরি মনোদৈহিক অস্থিরতা দূর করে আরামদায়ক একটি নিদ্রায় গমনে সাহায্য করে।
এই ক্ষেত্রে একটি হাদিসে এসেছে যে- 'আশা ক্ববলাল ইশা', অর্থাৎ, রাতের খাবার ইশার পূর্বেই হওয়া চাই। ভাবতেই অবাক লাগে, আজ থেকে প্রায় দেড় হাজার বছর পূর্বে, চিকিৎসা বিজ্ঞানের কোন প্রকার আধুনিকায়নই যখন বলা চলে হয়নি, সেই সময়ে কি করে প্রিয়তম রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম 'আশা' অর্থাৎ, রাতের খাবার ইশার নামাজের পূর্বে গ্রহণ করাকে মানব শরীরের জন্য উপকারী সাব্যস্ত করে এই কাজটির প্রতি মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে সক্ষম হলেন!
তাহাজ্জুদের সময় ও চিকিৎসা বিজ্ঞানঃ
এ কথা আমরা সকলেই জানি যে, মধ্য রাতে ঘুম থেকে জেগে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা প্রভূত সাওয়াবের একটি কাজ। মহান প্রতিপালকের নৈকট্য অর্জনেরও এটি অন্যতম মাধ্যম। কিন্তু মধ্য রাতের ঘুম থেকে উঠে তাহাজ্জুদ আদায় করা যে মানসিক অস্বস্তি, নিদ্রাহীনতা, হার্ট ও স্নায়ুর সংকোচন এবং বন্ধন, মস্তিষ্কের বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা স্বরূপ- সে কথা জানি কতজন! অভিজ্ঞ চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের ভাষ্য, যারা দূরের জিনিস ঠিকমত দেখতে পান না এ সময়ে নামাজ আদায় করা তাদের জন্য উত্তম একটি চিকিৎসা। এছাড়াও এ সময়ে নামাজ আদায় করলে বুদ্ধি, আনন্দ বৃদ্ধি পায় এবং মনোদৈহিক অসাধারণ শক্তির সঞ্চার হয় যা নামাজি ব্যক্তিকে সারা দিন উৎফুল্ল রাখে, কর্মক্ষম এবং চঞ্চল রাখে।
কার্টেসি : অজানা স্কলার
Comments
Post a Comment